দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মসন ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ (১৯ জুলাই)। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৭ মে)দ্বিজেন্দ্রলালের মৃত্যুসন ।ঐতিহাসিক নাটকের ক্ষেত্রে দ্বিজেন্দ্রলাল
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও তার বিভিন্ন রচনা বলি
Greatest historical dramatist Dwijendralal Roy and his various works
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মসন ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ (১৯ জুলাই)। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৭ মে)দ্বিজেন্দ্রলালের মৃত্যুসন ।ঐতিহাসিক নাটকের ক্ষেত্রে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বিশেষ স্বীকৃতি।দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কয়েকটি ঐতিহাসিক নাটকের নাম : 'প্রতাপসিংহ' (১৯০৫), 'দুর্গাদাস' (১৯০৫), 'নূরজাহান' (১৯০৮), 'মেবার পতন' (১৯০৮), 'সাজাহান' (১৯০৯) প্রভৃতি।এবং তার পৌরাণিক নাটক কোনগুলি হল : 'পাষাণী' (১৯০০), 'সীতা' (১৯০৮), 'ভীষ্ম' (১৯১৪) প্রভৃতি।এ ছাড়া ও তার কয়েকটি প্রহসনের নাম 'কল্কি অবতার' (১৮৯৫), 'বিরহ' (১৮৯৭), 'ব্রহস্পর্শ' (১৯০০), 'প্রায়শ্চিত্ত' (১৯০২), 'পুনর্জন্ম'(১৯১৯) প্রভৃতি, আনন্দ বিদায় (১৯১২) রঙ্গ-প্রহসনটি রচনা করে দ্বিজেন্দ্রলাল ( রবীন্দ্রনাথকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে রুচিবান পাঠক ও দর্শকের দ্বারা ভৎসিত হয়েছিলেন। ব্যক্তিগত এবং কুরুচিপূর্ণ আক্রমণের জন্য প্রহসন হিসেবে 'আনন্দবিদায়' সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে) । সামাজিক ও পারিবারিক নাটক গুলি 'পরপারে' (১৯১২), 'বঙ্গনারী' (১৯১৬) প্রভৃতি।
দ্বিজেন্দ্রলালের পৌরাণিক নাটকগুলির বৈশিষ্ট্য কী ?
দ্বিজেন্দ্রলালের পৌরাণিক নাটকগুলিতে পৌরাণিক কাহিনিকে নতুনভাবে উপস্থিত করার চেষ্টা দেখা যায়। পাশ্চাত্য শিক্ষাদীক্ষার জন্যই তিনি ভক্তিরসে পূর্ণ পৌরাণিক কাহিনিকে খানিকটা আধুনিক ছাঁচে ঢেলে নিয়েছেন। ফলে পৌরাণিক চরিত্রে আধুনিক মুখের ভাববৈশিষ্ট্য, বিশেষত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য সংযুক্ত হয়েছে।
দ্বিজেন্দ্রলালকে সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক নাট্যকার বলার কারণ কী ?
ঐতিহাসিক মূল্যে ও নাটকীয় উৎকর্ষে দ্বিজেন্দ্রলালের শ্রেষ্ঠ কীর্তি ঐতিহাসিক নাটকগুলি। রাজপুত বীরত্ব ও মুঘলযুগের কাহিনিগুলিতে তিনি অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে নাটকীয়তা সৃষ্টি করেছেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের রৌদ্ররসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁর ঐতিহাসিক নাটকগুলি রচিত হলেও সমসাময়িকঘটনা ও জনরুচির তাড়নায় তিনি প্রায় কোথাও ইতিহাসকে বিকৃত করেননি। নাটকে ইতিহাসের আনুগত্য আছে। ঐতিহাসিক নাটক স্বদেশপ্রেমের উঁচু সুর বাঁধা। তাই সংগত কারণেই দ্বিজেন্দ্রলালকে সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক নাট্যকার বলা হয়।
দ্বিজেন্দ্রলালের বিখ্যাত ঐতিহাসিক নাটক 'মেবার পতন'-এর কাহিনি জেমস টডের 'Annal and Antiquities of Rajasthan' নামক ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে গৃহীত।'মেবারপতন' (১৯০৮) নাটকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রাজপুত ইতিহাসের কাহিনি বিবৃত করেছেন।অবশ্য রাজপুত ও মুসলমান সম্রাটদের সংঘর্ষই নাটকটির বিষয়বস্তু।
চন্দ্রগুপ্ত (১৯১১) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ঐতিহাসিক নাটক। হিন্দু যুগ অবলম্বনে নাটকটি লেখা হলেও আসল আকর্ষণ মুঘল ও রাজপুত যুগের প্রতি। চাণক্যের চরিত্র নাটকের অমর সৃষ্টি।
ভারতবর্ষের সিংহাসনকে কেন্দ্র করে নানাধরনের স্বার্থ সংঘাত এবং ক্ষমতাবশ্বের যে বিচিত্র ইতিহাস মুসলমান আমলে গড়ে উঠেছিল এবং যে পটভূমির মধ্যে মানবিক প্রবৃত্তির যে বেদনা মিশ্রিত পরিণতি দেখা গেছে, দ্বিজেন্দ্রলাল তারই আলেখ্য রচনা করেছেন 'নূরজাহান' ও 'সাজাহান' নাটকে।
'সাজাহান' নাটকের চরিত্র - ঔরঙ্গজেব, দারা, দিলদার, পিয়ারা । মানসী, সত্যবতী, অমর সিংহ, মহৎ দ্বিজেন্দ্রলালের মেবার পতন' নাটকের চরিত্র। শের খাঁ, লয়লা, খসরু, জাহাঙ্গির—দ্বিজেন্দ্রলালের 'নূরজাহান' নাটকের।
ঐতিহাসিক নাটকের চরিত্র চিত্রণরীতি ও মানসিক দ্বন্দ্ব প্রভৃতিতে শেকসপিয়রীয় রীতি অনুসৃত হয়েছে।
COMMENTS